গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়টিতে একজন মা শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, বরং গর্ভের শিশুর সুস্থতা ও সঠিক বিকাশের জন্যও দায়বদ্ধ। শিশুর বৃদ্ধি ও ওজন অনেকাংশে নির্ভর করে গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভ্যাসের ওপর। অনেক সময় গর্ভাবস্থার শেষ দিকে গিয়ে চিকিৎসকরা যখন জানান শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তখন পরিবারে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। তাই সময় থাকতেই জানা উচিত কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে, যাতে করে মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকেন।

গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন বাড়ানোর পুষ্টিকর উপাদান

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার

শিশুর কোষ গঠন, পেশি তৈরি ও সার্বিক শারীরিক বিকাশের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি। ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল, ছোলা, সয়াবিন প্রভৃতি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। যারা নিরামিষভোজী, তারা বাদাম, দুধ, চিজ ও বিভিন্ন বীজজাত খাবার থেকে প্রোটিন নিতে পারেন।

কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি

শুধু প্রোটিন নয়, শিশু ও মায়ের শক্তির জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি। ভাত, রুটি, আলু, শস্যজাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। এতে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় এবং বাচ্চার বৃদ্ধিও হয় স্বাভাবিকভাবে।

স্বাস্থ্যকর চর্বি

অনেকে গর্ভাবস্থায় চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন, কিন্তু সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘি, অলিভ অয়েল, বাদামের তেল ও ফিশ অয়েলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভের শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক।

ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমূহ

আয়রন

রক্তস্বল্পতা গর্ভাবস্থায় শিশুর ওজন কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, কলা, লাল মাংস, ডাল প্রভৃতি খেতে হবে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যালসিয়াম

হাড় ও দাঁতের গঠন, পেশির বিকাশ এবং স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। দুধ, দই, চিজ, কাঁচা বাদাম, কালো তিল এবং ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।

ফলিক অ্যাসিড ও জিংক

ফলিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর স্নায়ু গঠনে সাহায্য করে। ব্রকলি, ডিমের কুসুম, ডাল, ও রসুনের মতো খাবারে এটি পাওয়া যায়। অন্যদিকে, জিংক শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

গর্ভাবস্থায় খাদ্য গ্রহণের সময় ও নিয়ম

অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া

একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে অল্প করে বারবার খেলে তা সহজে হজম হয় এবং পুষ্টিও ভালোভাবে শোষিত হয়। এতে মা’র বমি ভাব বা অস্বস্তি কমে।

পর্যাপ্ত পানি পান

গর্ভাবস্থায় শরীরের জলতৃষ্ণা বৃদ্ধি পায়, তাই পর্যাপ্ত পানি খাওয়া জরুরি। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে, যা প্ল্যাসেন্টার কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখে।

ঘুম ও বিশ্রাম

শুধু খাবারই যথেষ্ট নয়, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ গর্ভস্থ শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ও সঠিক খাদ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর সুষ্ঠু ওজন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে সবকিছুই হতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থেকে। একজন মায়ের প্রতিদিনের খাবারেই লুকিয়ে থাকে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। তাই জানাটা জরুরি কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে এবং সেই অনুযায়ী সচেতনভাবে খাদ্য তালিকা তৈরি করলেই গর্ভকালীন জটিলতা অনেকটাই কমে আসে এবং একটি সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।